Type Here to Get Search Results !

পুঁজিবাজারে ভালো মানের শেয়ার খুবই কম: আইসিবি চেয়ারম্যান

সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ভালো মানের শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে বুধবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আবু আহমেদ বলেন, ডিএসইকে আরও ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। বিশেষ করে আইপিওর ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ভালো মানের শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। এজন্য সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য ভালো শেয়ার পাবেন।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন এবং সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ পাবে। এজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাবলিক ইন্টারেস্টের চেয়ে বড় কিছু নেই। সম্প্রতি বিএসইসি কিছু গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার জন্য কিছু আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে পারিবারিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে না।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের পূর্বে বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনা করে থাকেন। এর মধ্যে প্রধান হলো রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পরিবেশ, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (ইএসজি) ঝুঁকি।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি বেশকিছু ব্লুচিপ কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে। পরে আমরা জানতে পেরেছি সেসব বিনিয়োগকারী ইএসজি চার্টারে স্বাক্ষর করেছে। তাই ইএসজি বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। ইনভেস্টমেন্ট রেজিলেন্সের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্যের ওপর এক্সেস নিশ্চিত করতে হবে। আর বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে হবে। এছাড়াও আমাদের গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ক্ষমতায়ন করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য ডিএসইর ক্ষমতায়ন জরুরি। আইপিও’র গুণগতমান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ডিএসই’র মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও বিনিয়োগকারীকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাজার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমাদের বিবেচনা করে ঋণ দেওয়া আবশ্যক। তিনি সরকারি কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবিএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন। মূল প্রবন্ধে তিনি সঞ্চয় বনাম বিনিয়োগ, কমন অ্যাসেট ক্লাস, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, স্টক বিনিয়োগ করে সফলতার উপায়, ভালো স্টক নির্বাচন করার নিয়ম, একটি ভালো বিনিয়োগ বাছাই করার মানদণ্ড এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেক গবেষণার মাধ্যমে বিনিয়োগ করে থাকেন। আর তাদের গবেষণা মূলত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। কিন্তু আর্থিক প্রতিবেদনগুলোতে অনেক সময় সঠিক তথ্য উপস্থাপিত হয় না। তাই আর্থিক প্রতিদেবনের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এ বাজারে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী হচ্ছে না।

তিনি বলেন, অডিটর, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের গবেষণা করার সুযোগ না থাকায় তারা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পুঁজিবাজার মধ্যস্ততাকারীদের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। যা বাজার উন্নয়নে সহায়ক হবে।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের নিয়ম-কানুনগুলো হঠাৎ পরিবর্তন করার কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও মন্দ কোম্পানিগুলোকে শাস্তির পাশাপাশি ভালো কোম্পানিগুলোকেও তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। যার যা কাজ তা সঠিকভাবে পালন করে পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, যতদূর জানা যায়, প্রতি বছর বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষা এবং সচেতনতার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এবারের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় পুঁজিবাজারেও ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের জন্য একটি আধুনিক এবং সময়োপযোগী আইনগত কাঠামো তৈরি করা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। আমরা যার যার জায়গা থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিশ্চিত করতে চাই। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ কাঠামো তৈরি করা।

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজিএম সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ বলেন, এই সপ্তাহ হলো বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও সুরক্ষা প্রচার এবং ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। আমরা আমাদের বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি।

তিনি বলেন, আমরা সুশাসন ও জবাবদিহির সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো অধিক শক্তিশালীর করার জন্য কাজ করছি, যেন আমাদের বিনিয়োগকারীরা তাদের লেনদেনে নিরাপদ বোধ করে এবং তাদের বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাসী হয়। আসুন আমরা এই বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহকে বৃহত্তর সচেতনতা, ক্ষমতায়ন এবং সহযোগিতার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই।

এমএএস/ইএ

 



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/szA8XKu

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.